কি কি কারণে আমরা রোগে আক্রান্ত হই?

কি কি কারণে আমরা রোগে আক্রান্ত হই?

Add Comment
1 Answer(s)

    ঘর-দোর পরিষ্কার রাখতে, জীবাণুমুক্ত রাখতে আমরা কতোই না পরিশ্রম করি। হাত ধোয়ার সাবান বা হ্যান্ড-ওয়াশ থেকে টয়লেট পরিষ্কারের জন্য বিভিন্ন জীবাণু নাশক পণ্য- জীবাণুর বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবহার করা যুদ্ধাস্ত্রের তালিকাটি বেশ লম্বাই! কিন্তু এত অধ্যাবসায়ী চেষ্টার পরও ৬৫% সর্দি-কাশি, ৫০ % ডায়রিয়া আর ৫০-৮০% খাদ্যে জীবাণুর কারণে সৃষ্ট বিষক্রিয়ার মূল কারণ কিন্তু আপনার ঘরের ভেতরে থাকা জীবাণু। অবাক হচ্ছেন? কিন্তু এটিই বাস্তব।

    কিন্তু কেন এরকম হয়? চলুন উত্তর খোঁজা যাক। যদি আমাদেরকে প্রশ্ন করা হয়, ঘরের কোন স্থানটিতে সবচেয়ে বেশি জীবাণু থাকতে পারে, তবে আমাদের উত্তর কি হবে? বেশিরভাগই বলবেন, “কোথায় আবার, টয়েলেটে!” জেনে অবাক হবেন, উত্তরটি কিন্তু পুরোপুরি ভুল। ঘরের যে স্থানটিতে সবচেয়ে বেশি জীবাণু থাকে সেটি হলো আমাদের রান্নাঘর। আর সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে, রান্নাঘরের যে স্থান বা চপিং বোর্ডে আপনি কাটাকুটির কাজ করছেন, সেখানে জীবাণুর পরিমাণ আপনার বাসার টয়লেটের থেকেও ২০০ গুণ বেশি! এটার মূল কারণ হচ্ছে, আমরা টয়লেট পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যপারে যতটা সচেতন, আমাদের রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার ব্যপারে ঠিক ততটাই অসচেতন।

    স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের সাথে আমরা যদি জেনে নিতে পারি যে ঘরের কোথায় কোথায় সবচেয়ে বেশি জীবাণু থাকে, তবে জ্বর, সর্দি,কাশি, ডায়রিয়ার মতো ব্যপারগুলো এড়ানো যেতে পারে। চলুন জেনে নিই আমাদের ঘরের কোন স্থানগুলোতে সবচেয়ে বেশি জীবাণু থাকে।

    (ক) বাসন-কোসন পরিষ্কারের জন্য ব্যবহৃত স্পঞ্জ বা ন্যাকড়া

    image

    রান্নাঘরের বাসন-কোসন, বেসিন বা সিঙ্ক পরিষ্কারের জন্য আমরা স্পঞ্জ, পুরনো ছেঁড়া কাপড় বা ন্যাকড়া ব্যবহার করি। ব্যবহারের পরে সেই স্পঞ্জ বা ন্যাকড়াটিকে ভেজা অবস্থাতেই রেখে দেয়া হয়। পরেরবার কাজ করার সময় হয়তো আবার সেই ভেজা স্পঞ্জটিই আপনি ব্যবহার করছেন। রান্নাঘরের এই ভেজা স্পঞ্জ বা ন্যাকড়া হচ্ছে জীবাণুদের জন্মানোর জন্য সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। তাই যখন ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে আপনি থালা-বাসন পরিষ্কার করছেন, তখন জীবাণু তো দূর হয়ই না; উলটো আপনি আপনার খাবারের জন্য ব্যবহৃত প্লেট বা পাতিলে আরো কিছু জীবাণু যোগ করছেন!

    যা করা উচিতঃ

    • (১) স্পঞ্জটিকে প্রতিবার ব্যবহারের পর কয়েক ঘণ্টা শুকনোর জন্য সময় দিন। এতে স্পঞ্জে থাকা ব্যাকটেরিয়া গুলো মরে যাবে।
    • (২) স্পঞ্জটিকে শুকোতে দেয়ার আগে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যেন এতে কোন ময়লা-আবর্জনা লেগে না থাকে।
    • (৩) স্পঞ্জটিকে বিভিন্ন জীবাণুনাশক ব্যবহার করে পরিষ্কার রাখুন। চেষ্টা করুন স্পঞ্জ বা ন্যাকড়া প্রতি এক থেকে দুই সপ্তাহ পর পর পালটে ফেলতে। যাদের মাইক্রো ওয়েভ ওভেন ব্যবহারের সুযোগ আছে তারা ভেজা স্পঞ্জ শুকিয়ে যাবার পর ত্রিশ সেকেন্ডের জন্য ওভেনে রেখে গরম করে নিতে পারেন। এতে স্পঞ্জে থাকা অবশিষ্ট জীবাণু মারা যাবে।

    (খ) কাটিং বা চপিং বোর্ড

    image

    আজকাল শাক-সবজি বা মাংস কাটার কাজে অনেকেই কাটিং বা চপিং বোর্ড ব্যবহার করেন। কাটাকাটি করার সময় চপিং বোর্ডে দাগ পড়ে যেতে, গর্ত হয়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন, এই দাগ বা গর্তগুলো হচ্ছে জীবাণুদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।

    যা করা উচিতঃ

    • (১) মাংস ও সবজি কাটার জন্য আলাদা আলাদা চপিং বোর্ড ব্যবহার করুন। কারণ একই চপিং বোর্ডে মাছ-মাংস আর সবজি কাটা হলে এতে জীবাণু জন্মানোর ঝুঁকি অনেক বেশি।
    • (২) চপিং বোর্ড পরিষ্কার করতে প্রথমে একে গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। তারপর এতে লেগে থাকা কঠিন ময়লা বাসনকোসন ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত ডিশ-ওয়াশার দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।

    (গ) রান্নাঘর পরিষ্কার রাখুন

    পুরো রান্নাঘর আর এর মেঝে পরিষ্কার রাখার ব্যপারটি অনেক গুরত্বপূর্ণ। এছাড়া রান্নাঘরের পানির কল বা ট্যাপও জীবাণুর খুব ভাল একটি উৎস।

    যা করা উচিতঃ

    • রান্নাঘরের মেঝে, যে স্থানে রান্নার কাজ করেন, সেই জায়গাগুলো সাবান, ডিটারজেন্ট, গরম পানি, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন।

    (ঘ) সিঙ্ক ড্রেইন

    রান্নাঘরের বেসিন বা সিঙ্ক থেকে যে পথে ময়লা পানি বের হয়ে যায় সেটিতে প্রায়ই ময়লা-আবর্জনা জমে গিয়ে জীবাণুর আবির্ভাব ঘটাতে পারে।

    যা করা উচিতঃ
    রান্নাঘরের মেঝে পরিষ্কার করার সময় সিঙ্ক বা বেসিনের ড্রেইনের কথা ভুলে যাবেন না যেন!

    (ঙ) দরজার হাতল বা নব

    এটা হতে পারে ঘরের দরজা কিংবা ঘরে থাকা ফ্রিজের দরজার হাতল বা নব। যে কারো মাধ্যমেই দরজার হাতল বা নবে ব্যাকটেরিয়া চলে আসতে পারে। আর এই ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমেই হতে পারে নানা রোগ-ব্যধি।

    যা করা উচিতঃ

    • (১) নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন।
    • (২) ঘরের, ফ্রিজের,টয়লেটের হাতল বা নব বিভিন্ন জীবাণুনাশক ব্যবহার করে পরিষ্কার রাখুন।

    (চ)টুথব্রাশ

    দাঁত পরিষ্কারের টুথব্রাশ থেকে হতে পারে জীবাণুর সংক্রমণ।

    যা করা উচিতঃ

    • (১) প্রতি তিন মাস পর পর আপনার টুথ ব্রাশ পরিবর্তন করুন।
    • (২) কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হবার পর পরই টুথ ব্রাশ পরিবর্তন করুন। এতে অসুস্থ অবস্থায় আপনার মুখে থাকা জীবাণু ব্রাশে চলে আসলে, সেটি দিয়ে পুনরায় আপনার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নেই।

    তো আজকে থেকে শুরু করুন, ঘরেই ঘাপটি মেরে থাকা রোগ-সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ।

    Professor Answered on September 9, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.