বেকার মানুষের জন্য সর্বোত্তম পরামর্শ কী?
বেকার মানুষের জন্য সর্বোত্তম পরামর্শ কী?
বেকার হলে, পরামর্শ নয়, নিজের অনুভূতি, অভিজ্ঞতার কথাই বলে যাবো। সেটা, পরামর্শ হিসেবে বিবেচিত হতে, বা না ও হতে পারে।
১। এটা মনে রাখতে হবে, বেকারত্ব কিনতু, চিরস্থায়ী নয়, একদিন ঘুচে যাবে।
হয়তো, নিজের স্বপ্নের চাকরীটি অধরা থাকতে পারে, কিন্তু, কোনো না কোনোভাবে একটি চাকরী বা কোনোভাবে রোজগারের একটি সূত্র বেরোবেই,
ইচ্ছে করে, বেকার না থাকলে, আজীবন বেকার থাকার সম্ভাবনা, খুবই কম।
২। বেকারত্বের জন্য মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু, এটা মনে রাখতে হবে, মন খারাপের দিন যত বেশী করে চলে যাচ্ছে, ততোই ভালো, কারণ, মন ভালো হওয়ার দিন এগিয়ে আসছে,
৩। নিজে বেকার, এটা বলতে, সংকোচ বোধ করা বা লজ্জা পাওয়া উচিৎ নয়, বরঞ্চ, বলা উচিৎ।
বলা উচিৎ, এই কারণে বললাম,
ক) এতে অপমান বা লজ্জার কিছু নেই,
খ) এটা শুনে, কেউ বেকার থেকে সাকার হওয়ার ব্যাপারে, সাহায্য না করলে, অসুবিধে নেই।
কিন্তু, উল্টোটা ও তো হতে পারে,
বেকার যখন আমি, এক বন্ধুর বোনের বিয়েতে, বিয়ের দিন, ওদের বাড়ীতে রাত্রিবেলা খাওয়ার প্যান্ডেলে নিমন্ত্রিতদের পরিবেশন করছি। হঠাৎ করে, নিমন্ত্রিতদের মাঝে আমার অচেনা, বয়স্ক একজন আমাকে ডেকে বেশ জোরেই বললেন,
“এই ছেলে, ওই তরকারীটা আরেকটু নিয়ে আয় তো,”
তাঁর গলার স্বরটা কেমন জানি লাগলো, কী রকম জানি রুক্ষ, যেন একটা কমান্ডিং ভয়েস।
যাঁরা খাচ্ছিলেন, অনেকেই আমার দিকে তাঁকালেন। নিমন্ত্রিতদের মধ্যে কিছু, আমার বয়সী ছেলে, মেয়েরা বসে খাচ্ছিলো, তাঁরা আমার দিকে তাঁকালো। কেমন করে জানি তাঁকালো। কেমন করে যে, সেটা বুঝাতে পারবো না, আর দুটো মেয়ে, আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে, নিজেদের মধ্যে কিছু বলাবলি করছিলো, আর হাসাহাসি করছিলো।
আমার যৌবনের প্রেস্টিজ, যেন কিছুটা খান, খান।
আবার ভাবলাম, আমার বাবা, কাকা ও তো, সবসময় না হলে ও বা, অনেকসময়ই এরকমভাবেই আমার সাথে কথা বলেন।
যাক, চট করেই দৌড়ে গিয়ে, তরকারীটা নিয়ে এসে, তাঁর পাতে দিই।
তরকারী দেয়ার পর, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি যে আমাকে তুই সম্বোধন করেছেন, (নিয়ে আয়) এতে আমি বিরক্ত হয়েছি কী না ?
আমি তাঁকে বললাম, তিনি আমার পিতৃতুল্য এবং অতি স্বচ্ছন্দে আমাকে পুত্রবৎ ভাবতে পারেন।
তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী করি আমি।
বললাম, চাকরীর সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
তিনি আমাকে, তাঁর অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলে চলে গেলেন।
পরে, আমার ওই বন্ধুটির বাবা আমাকে বললেন, যে ওই ভদ্রলোক কেন্দ্রীয় সরকারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উচ্চ পদে চাকরী করেন।
যথারীতি আমি তাঁর অফিসে গিয়ে দেখা করি। এবং তাঁর অসীম কৃপায়, আমি কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরে স্থায়ী চাকরীতে যোগ দিই।
জীবনে প্রথম বেকার থেকে, সাকার হয়ে উঠার, রূপকথা।
চাকরীটির জন্য আমাকে পড়াশোনা করতে হয়েছে, পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, সব পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হয়েছে। তিনি, আমাকে শুধু বলে দিয়েছিলেন, কখন এপ্লাই করতে হবে, পরীক্ষায় বসার জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, ইন্টারভিউর জন্য কী রকম প্রস্তুতি নিতে হবে, এসবই।
এটা একটা কাকতালীয় বা ব্যতিক্রমী ঘটনা বলেই মনে হতে পারে।
কিন্তু, আমার বলার উদ্দেশ্য,
বেকারত্বের কথা শুনে, কেউ যদি সাহায্য না করেন, তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
বেকারত্বের কথা শুনে যদি কেউ তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করেন, উপহাস করেন, এটা তোলা থাকবে, শুধুমাত্র তাঁরই জন্য।
বেকারত্বের কথা শুনে, কেউ সাহায্য করতে এগিয়েও তো আসতে পারেন। কখন, কোথায়, কিভাবে, কেমন করে এটা ঘটে যেতে পারে, সেটা বলা খুবই মুস্কিল। কারণ, এসব স্ক্রীপ্ট, উপর থেকেই কেউ লিখে রাখেন।
সুতরাং, নিজের অবস্থানটি স্পষ্ট করে জানাতে তো কোনো অসুবিধে নেই।
বেকার হলে, শুনতে হয় নানা কথা,
১। “এতো লোকের চাকরী, বাকরী হয়, তোমার হয় না কেন ” ?
২। “আর কবে চাকরী হবে ? বয়স হয়ে যাচ্ছে, বিয়ে সাদির কী হইবো” ?
৩। যিনি টেকনিক্যাল লাইনে পড়াশোনা করেছেন, তাঁকে, “আজকাল টেকনিক্যাল লাইনে ও প্রচুর বেকার”
৪। যিনি নন-টেকনিক্যাল লাইনে পড়েছেন, তাঁকে, “টেকনিক্যাল লাইনে পড়লে, সুবিধা হইতো”
এসব কথায় মন খারাপ হয়, হতাশা বাড়ে তো ?
মনে রাখতে হবে, রাস্তা দিয়ে চলতে, শরীরে অনেক ধুলোবালি এসে জমা হয়। বাড়ীতে এসে একবার স্নান করে নিলেই, সব চলে যায়।
বেকার মানুষের জন্য সর্বোত্তম পরামর্শ ? কী পরামর্শ ?
ক) “চেষ্টা করে যান, চেষ্টায় সব হয়”,
খ) “চাকরী না পেলে, টুকটাক ব্যবসাপাতি করুন”,
গ) “একটু এমপ্লয়মেন্ট নিউজটা রেগুলার ফলো করুন”,
ঘ) “নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে”,
এসব পরামর্শ ?
দিই না, কারণ, বেকারত্বের যন্ত্রনা আমাকে তীব্রভাবেই সইতে হয়েছে এবং আমি নিশ্চিতভাবে এটা জানি,
যিনি বেকার, তিনি বেকারত্ব ঘুচানোর জন্য, চেষ্টার সর্বোত্তম স্তরে অবস্থান করেন।
আমার কাছে,
বেকারত্ব, জীবনের একটি ছোটগল্প মাত্র, চিরস্থায়ী অধ্যায় নয়,
বেকারত্ব, জীবনের কঠোর বাস্তবকে চিনিয়ে দেয়ার, একটি প্রশিক্ষণ পর্যায় মাত্র,
বেকারত্ব, ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার একটি পরীক্ষা মাত্র।
আমার এসব কথা, বেকারত্ব ঘুচাতে বিন্দুমাত্র সাহায্য করবে না জানি,
তবু ও বেকার জীবনের হতাশার দিনগুলি যদি, কিঞ্চিৎ অন্যরকম ভাবে দেখা যায়, বেকার জীবনের মন খারাপের গল্পটি, যদি একটু অন্যরকম ভাবে, লেখা যায়।
ধন্যবাদ।