হাসি ও কান্নার কোনো উপকারিতা আছে কি?
হাসি ও কান্নার কোনো উপকারিতা আছে কি?
হাসি এবং কান্না দুটোই মানুষের আবেগতাড়িত বিষয় এবং দুটোই স্নায়ুতন্ত্রের সাথে জড়িত। আমরা যখন অনেক বেশি আনন্দ পাই তখন হাসি অঅর যখন অনক বেশি কষ্ট পাই তখন কাঁদি। তবে হাসি ও কান্নাকে কখনই দমিয়ে রাখা উচিত না। কান্না বা হাসি চাপিয়ে রাখলে শরীর ও মনে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। আপনার যদি হাসতে ইচ্ছা করে তবে প্রাণখুলে হাসুন এবং কাঁদতে ইচ্ছা করলে মন ভরে কাঁদুন। খেয়াল করে দেখবেন যারা কান্নাকে দমিয়ে রাখেন তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসি এবং কান্নার সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কিছু উপকারিতা আছে যা আমাদের শরীর ও মনকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে।
রক্তচাপ কমাতে ও শরীর ভালো রাখতে হাসি-কান্না
আমরা সবাই জানি যে হাসি আমাদের টেনশন কমায়, শরীর ভালো রাখে বিশেষ করে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে হাসি । বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, হাসির রয়েছে নানারকম শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা। হাসি শরীরে রক্তের প্রবাহ ও অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে রক্তের চাপ কমায় ফলে হৃদরোগের আশংকা অনেকটা হ্রাস পায়। আপনি কি জানেন কান্নাও একই কাজ করে! মনোবিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, মানসিক চাপ কমাতে, কর্মদক্ষতা বাড়াতে ও শারীরিক ভাবে ফিট থাকতে হাসির পাশাপাশি কান্নাকাটিরও সমান ভূমিকা রয়েছ। আরো মজার তথ্য জানিয়েছেন গবেষকরা, আমাদের মস্তিষ্কের একই জায়গা থেকে কান্না ও হাসির অনুভূতি আসে। হাসি যেভাবে রক্তচাপ কমিয়ে শরীরকে সুস্থ্ রাখে, কান্নাও তাই করে।
মানসিক চাপ কমাতে হাসুন ও কাঁদুন
মানসিক চাপ ভারসাম্য নষ্ট করে আর কান্না মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে। কান্না মানুষের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে রিলিজ দিয়ে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। আর আপনি যদি প্রচন্ড দুঃখের সময় বা মন খারাপ হলে কান্না চাপিয়ে রাখেন তাহলে তা আপনার মানসিক ভারসাম্যকে বিপর্যস্থ করে এমনকি শরীরের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
আর হাসির কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আপনার আনন্দকে দ্বিগুণ করে দিয়ে সকল মানসিক স্ট্রেস বা উদ্বেগ নিমিষে কমিয়ে দিতে প্রাণখোলা হাসির জুড়ি নেই। দুশ্চিন্তামুক্ত ভালো মন যে কোনো রোগের মহাষৌধ। আর মনকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে হলে বেশি করে হাসুন। প্রাণ মন উজাড় করে হাসুন, উচ্চস্বরে হাসুন। দেখবেন আপনার মন কেমন পল্কার মতো হালকা লাগছে।
ওষুধের পরিবর্তে হাসি
জার্মান লাফটার থেরাপিস্টের প্রধান মিশেল শেফনার জানান, “মস্তিষ্ক সচল রাখতে হাসির অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে কারণ যখন কেউ উচ্চস্বরে হাসে তখন তাঁর মস্তিষ্কে নানা উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় যা মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের স্বাভাবিকতা ধরে রাখে।“ শুধু তাই নয়, ডা. রেমন্ড মুদিও অনেকটা একই কথা বলেন। তিনি তাঁর ‘লাফ আফটার লাফ : দি হিলিং পাওয়ার অভ হিউমার’ গ্রন্থে লিখেছেন, “হাসির সাথে শরীরের স্বাস্থ্যগত অবস্থার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন যে, হাসির সময় পেশীর টান অনেকটা আলগা হয়ে যায়। তাই দম ফাটানো হাসি পেশীর ব্যথা নিমেষে দূর করে দিতে পারে।“
হাসির নিরাময় ক্ষমতার বিস্মিত সত্যটি উপলব্ধি করে এখন অনেক চিকিৎসকরাই ওষুধের পরিবর্তে হাসতে উৎসাহিত করেন। এরকমই একটি পদ্ধতির কথা আমরা প্রায় সকলেই জানি তা হচ্ছে লাফটার থেরাপি। এই থেরাপিতে রোগীকে উচ্চস্বরে চিৎকার করে হাসতে হয়, এই উচ্চস্বরে হাসির মাধ্যমেই তাঁর পেশী সক্রিয় হয়, হার্ট রেট বেড়ে যায় এবং ব্যাথা নিরাময়ে সাহায্য করে।
দুঃখ বেদনার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে কাঁদুন
আমাদের মনের আবেগ প্রকাশের একটি প্রাকৃতিক উপায় হচ্ছে কান্না। যখন আমাদের মন দুঃখিত থাকে তখন আমরা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হই। আস্তে আস্তে এই বিষণ্ণতা হতাশায় পরিবর্তিত হয়, তারপর তা মনের চাপ বাড়িয়ে মাথা ব্যথা বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। এই দুঃখ বেদনার ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে উঠার জন্য তাই প্রয়োজন কান্নার। এই বিষয়ে আরেকটু পরিষ্কার ধারণা দেয়ার জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বায়োকেমিস্ট ডা. উইলিয়াম ফ্রাইয়ের কথা তুলে ধরতে পারি। তিনি বলেন যে, “দুঃখ, বেদনা, মানসিক আঘাত দেহে টক্সিন বা বিষাক্ত অণু সৃষ্টি করে আর কান্না এই বিষাক্ত অণুগুলোকে শরীর থেকে বের করে দেয়। এ কারণেই দুঃখ ভারাক্রান্ত ব্যক্তি ভালভাবে কাঁদতে পারলে নিজেকে অনেক হালকা মনে করে।“
তাই কাঁদার সময়ও মন খুলে কাঁদুন। দরকার হলে হাউমাউ করে বা ফুঁপিয়ে কাঁদুন। অন্যের সামনে কাঁদতে অস্বস্তি হলে বাথরুমে যেয়ে পানির কলটি ছেড়ে দিয়ে বা মিউজিক ছেড়ে দিয়ে কাঁদুন, কিন্তু কাঁদুন। মনের কষ্ট কখনো মনে পুষে রাখবেন না। কান্নার মাধ্যমে আপনি আপনার মনের যতো জমানো কষ্ট, ক্ষোভ, রাগ, হতাশা, ব্যাথা-বেদনা আছে তা বের করে দিন। কান্নার ফলে আপনি আবার সহজ হয়ে নিজের মধ্যে নতুন শক্তি পাবেন আরেকবার এগিয়ে চলার।