জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটি কী এবং কেন?
জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটি কী এবং কেন?
স্বাধীনতা: জীবনের সবচেয়ে বড় অভাব
আজকের মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ – স্বাধীনতার অভাব। ফরাসি দার্শনিক জঁ জাক রুশো কত সত্য বলেছিলেন, “মানুষ স্বাধীন জন্ম নেয়, কিন্তু সে সর্বত্র শৃঙ্খলে আবদ্ধ।”
শৈশব থেকেই শুরু হয় দাসত্বের জীবন
আমাদের জীবনে দাসত্ব শুরু হয় শৈশব থেকেই। ছোটবেলায় আমরা বাবা-মায়ের কাছে দাস, বড় হয়ে পরিবারের কাছে দাস। কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে স্বেচ্ছায় নিজেদের মনিবের কাছে দাস হয়ে যাই। ব্যবসায়ী হলে আমরা কর্মচারী এবং বাজারের কাছে দাস হয়ে যাই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমাজের দাস হিসেবেই থাকি আমরা।
সম্পদের ভাণ্ডার, কিন্তু স্বাধীনতার অভাব
আপনি বিশ্বের যেকোনো পরিমাণ সম্পদ, ক্ষমতা বা খ্যাতি অর্জন করতে পারেন, কিন্তু আপনার জীবনে স্বাধীনতা অর্জনের আশা করতে পারবেন না। সঠিক বলেছেন সন্ত তুলসীদাস, “পরাধীন সুখ স্বপ্নো নহি” (নিজের উপর নির্ভর না করা ব্যক্তি স্বপ্নেও সুখ পায় না)।
উচ্চ পদেও স্বাধীনতার অভাব
আপনি একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা হতে পারেন, তবুও অসুখী থাকতে পারেন, কারণ রাজনীতিবিদদের ইচ্ছামতো কাজ করতে হয়। একজন শীর্ষ মন্ত্রী হলেও জনগণের ইচ্ছামতো চলতে হবে বলে অসুখী থাকবেন। সফল উদ্যোক্তা হলেও গ্রাহক, বাজার এবং প্রতিযোগীদের নিয়ে সবসময় চিন্তা করতে হবে। বিশ্বের জনপ্রিয় তারকা হলেও নিজের খ্যাতির বন্দী হয়ে পড়েন এবং স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন।
দাসের জীবন – মনিবের সন্তুষ্টির জন্য
যখন আপনার স্বাধীনতা থাকে না, তখন আপনি দাসের মতো নিজের নিয়ন্ত্রকর্তার ইচ্ছামতো কাজ করেন। আপনি যখন আপনার মনিবের আদেশ পালন করছেন, তখন আপনি আপনার জীবন বাঁচাচ্ছেন না, বরং আপনার মনিবের খুশির জন্য বাঁচছেন। আপনি যখন আপনার মনিবের আদেশ পালন করছেন, আপনি আপনার জীবন যাপন করছেন না, আপনি আপনার মালিকের সন্তুষ্টির জন্য বেঁচে আছেন।
শুধু ভালোবাসার কাজে স্বাধীনতা
আপনি শুধুমাত্র আপনি যা ভালোবাসেন তা করলেই আপনার জীবন বাঁচান। আপনি যা ভালোবাসেন তা করার সামর্থ্য থাকে শুধুমাত্র যখন আপনি স্বাধীন হন। এই কারণেই আজকের দুনিয়ায় স্বাধীনতা সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস, কারণ স্বাধীনতার জোগান কম কিন্তু চাহিদা বেশি।
স্বাধীনতা: জীবনের সবচেয়ে বড় অভাব
স্বাধীনতা অবশ্যই জীবনের একটি উপহার, যা খুব কম লোকই সহজে পেতে পারে। বেশিরভাগ মানুষই ক্ষমতা, সম্পদ, আরাম, খ্যাতি ইত্যাদির মতো পার্থিব জীবনের সুখের জন্য তাদের স্বাধীনতা বিনিময় করতে পছন্দ করে। মার্ক টোয়েনের কথাটি এটাই সার করে দেয়: “এটি ঈশ্বরের কল্যাণে যে আমাদের দেশে আমাদের কাছে এই তিনটি অবর্ণনীয় মূল্যবান জিনিস রয়েছে – বাক স্বাধীনতা, বিবেকের স্বাধীনতা এবং – যেগুলির কোনটিই কখনও অনুশীলন করা যায় না।” (বিবেকের স্বাধীনতা – freedom of conscience, বিবেক – conscience)
এই কথার কিছুটা সত্যতা রয়েছে। সমাজে চলতে গেলে কিছুটা বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হয়। কিন্তু সত্যিকারের জীবন উপভোগ করতে হলে স্বাধীনতা খুবই জরুরি।
স্বাধীনতা খোঁজা
তাই একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি তার জীবনে যতটা সম্ভব স্বাধীনতা চান। নিজের মনের মতো চলার স্বাধীনতা, নিজের পছন্দের কাজ করার স্বাধীনতা, নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার খোঁজাই আমাদের জীবনকে সार्थক করে তোলে।
কীভাবে স্বাধীনতা অর্জন করবেন?
স্বাধীনতা অর্জন করা কঠিন হতে পারে, কিন্তু অসম্ভব নয়। এখানে কয়েকটি টিপস দেওয়া হল:
- আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করুন: আপনি যত দক্ষ হবেন, তত বেশি চাহিদাপূর্ণ হবেন এবং আপনার শর্তে কাজ করতে পারবেন।
- আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করুন: অর্থ সব কিছু না হলেও, এটি আপনাকে অনেক স্বাধীনতা দেয়। নিজের খরচ কমান এবং আয় বাড়ানোর উপর ফোকাস করুন।
- সহজ জীবনযাপন করুন: প্রয়োজনের বাইরে জিনিস কিনবেন না। কম চাহিদা থাকলে, কম নির্ভরতা থাকবে, ফলে স্বাধীনতা বাড়বে।
- না বলতে শিখুন: সব সময় সবার কথা মেনে চলবেন না। আপনার মতের সাথে না মেলে এমন কাজে জড়ানোর জন্য মানুষজন আপনাকে চাপ দিতে পারে। “না” বলতে শিখুন এবং আপনার সীমানা বজায় রাখুন।
- স্বপ্ন দেখুন : আপনি কী আসলে চান, জীবনে কী অর্জন করতে চান – সে সম্পর্কে স্বপ্ন দেখুন। এবং সেই স্বপ্নগুলো পূরণের জন্য কাজ করুন। স্বপ্ন পূরণের পথেই সত্যিকারের স্বাধীনতা পাওয়া যায়।