সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির একটি উদাহরণ দিন ?

    সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির একটি উদাহরণ দিন ?

    Train Asked on February 12, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    2 Answer(s)

      একজন সফল ডাক্তার। তার একজন সুন্দরী বউ আছে যাকে জীবনের চেয়ে বেশী ভালবাসে। বউ প্রেগনেন্ট। এক জোড়া ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জনক সে। জমজ কন্যাদের বয়স ১২। সুন্দর ছিমছাম পরিবার। হাসি আনন্দে ভরপুর। প্রতিদিন রোগী দেখেন, বাসায় আসেন পরিবারের সাথে সময় কাটান। হটাৎ আমাদের পৃথিবী ভয়ানক ভাইরাসে আক্রান্ত। সমানে মারা যাচ্ছে মানুষ। জীবন রক্ষার শপথ নেওয়া ডাক্তাররা মৃত্যুর ঝুঁকি আছে জেনেও থামতে পারেন না। ঝাপিয়ে পড়েছে সকল ডাক্তার নামের সত্যিকারের বীরেরা। হার মানাতে সকলের কমন শত্রুকে।

      ভাইরাসটা ভয়াবহ রকমের ছোঁয়াচে। সেই ডাক্তার আক্রান্ত হয়ে গেলেন। তিনি জানেন আর তার বাড়ি ফেরা হবে না। কিন্তু একবার তার পরিবারকে দেখতে তাকে যেতে হবেই হবে। সে সবরকম প্রটেকশান নিয়ে বাসার বাহিরের গেটে দাড়িয়ে টাটা দিচ্ছে দুই কন্যাকে। স্ত্রীর চোখ ছলছল। দুপাশ থেকেই দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরার তীব্র বাসনা। কিন্তু সম্ভব না। হয়তোবা এই যাওয়াই শেষ যাওয়া এক জোড়া মেয়ের বাবার। হয়তো এই যাওয়াই শেষ যাওয়া একজন স্ত্রীর স্বামীর। চলে যেতে হবে। গাড়ি আসলো, পিছনের দরজা খুলে গেলো। সে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ীর দিকে। পেছনে ফেলে যাচ্ছে জগতের সব ভালবাসা……

      কঠিন কি? এরকমই কিছু একটা পড়েছিলাম ফেসবুকে কতটা সত্য কতটা গুজব কে জানে। কিন্তু অসম্ভব নয়।


      মীরার স্বামী মারা গিয়েছে অনেকদিন হয়। সেই থেকে শব্দই(তার ছেলে) তার একমাত্র দুনিয়া। শব্দের বয়স আট। মা ছাড়া সে কিচ্ছু বোঝে না। প্রতিদিন সকালে মা তাকে হোমে দিয়ে যায় আর সন্ধ্যায় ফেরার পথে বাসায় নিয়ে যায়। আসা যাওয়ার এই সময়টা শব্দের খুব প্রিয়। এই সময় তারা দুজন রাজ্যের সব গল্প করে। মা তাকে কবিতা শোনায় মাঝে মাঝে। চারদিকে করনার প্রভাব। মীরা জানে তার বাসায় থাকা উচিত, কিন্তু অফিস ছুটি দেয় নি। তাকে যেতেই হবে।

      মীরা আক্রান্ত করোনা ভাইরাসে। তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শব্দ চিৎকার করে বলছে, মা আমার মাকে তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো। আমি আম্মুর কাছে যাবো। সে হুটোপুটি করছে। কিন্তু পুলিশ তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। তার মায়ের কাছে তাকে যেতে দেওয়া হবে না। মীরা একবার ফিরে তাকালো। তার কি আর একবার শব্দকে ঝাপটে ধরার বাসনা পূর্ণ হবে। শুধু একবার? হবে?

      কঠিন?


      স্পেন থেকে এসেছে মাহাতাব। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবারের সাথে দেখা। শালার স্পেনে পাঁচবার টেস্ট করছে। আর এরা আমাকে বলে কিনা বাসায় বন্দি থাকতে। আমি পুরো সুস্থ মানুষ। আমার চেয়ে এরা বেশী বোঝে। কতদিন পর আব্বারে দেখুম। তারে কি জড়ায় ধরবো না নাকি? বাড়ি ফিরে মাহাতাব ঝাপটে ধরলো পিতা মফিজ মিয়াকে। পা ধরে সালাম করলো। মাকে আঁকড়ে ধরলো। মাহাতাবের দুনিয়াতে আর কেউ নেই। এদের দুজনের জন্যেই এতকিছু।

      বাজান এবার তোরে একটা বিয়া দিমু

      কি যে কন আম্মা। এখনের মেয়েরা ভাল নাকি? আপনার সাথে পরে ঝামেলা করবো। আমি বিয়া করুম না আম্মা।

      কি যে কছ মনা, আমি কি ঝামেলার মানুষ নাকি। একটা মাইয়া দেখছি তোর জন্য। দেখিস তুই। আগে খায়া নে।

      আম্মা আমারে কয় চৌদ্দ দিন রুমে বন্দি থাকতে এতদিন পর আপনাগো দেখছি আটকা থাকুম কেমনে?

      আরে ধূর আমার পোলার রোগ হয় নাকি। যতসব ফালতু কথা বাজান।

      দশদিন পর মাহতাব, তার বাবা আর মা হাসপাতালে ভর্তি। সবার অবস্থা খুব সিরিয়াস। মাহাতাবের বাবা হার্টের রোগী আর মায়ের ডায়বেটিস।

      মাহতাব সুস্থ। তার এমিউন সিস্টেম ভাল ছিল। কিন্তু বাসায় ভাত বেড়ে দেওয়ার কেউ নেই। জাপটে ধরার কেউ নেই। তার বাবা মায়ের শেষকৃত্য কিভাবে কোথায় হয়েছে তার জানা নেই। জানালার বাহিরে তাকিয়ে মাহাতাব কি দেখে শুন্য আকাশে? নীল আকাশ এত অন্ধকার লাগে কেনো? সে কি খুনী? সে কি খুন করেছে?

      কঠিন?


      আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি খুব কঠিন। আমরা অনেকেই আছি এর ভয়াবহতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছি। এর পরিনতি প্রতিদিন টিভিতে দেখেও আমাদের হুশ হচ্ছে না। আসলে যতক্ষন নিজের উপরে না আসে ততক্ষন আমাদের ঘুম ভাঙে না। এখনো সময় আছে একটু সাবধান হই একটু সিরিয়াস হই। নাইবা হলাম নিজের জন্য কিন্তু বাবার কথা ভাবি, আমার মায়ের কথা ভাবি, আমার ছোট্ট শিশুর কথা ভাবি। আমার শহরের পরিচিত অপরিচিত সব মানুষগুলোর কথা ভাবি।

      মৃত্যু ভয়ানক। মৃত্যুর পর মানুষটা চিরতরে হারিয়ে যাবে। কখনো তার গায়ের গন্ধ শুকতে পাবো না। তাকে ধরতে পারবো না। তার সাথে আর হাসতে পারবোনা। সে দৃষ্টিসীমার বাহিরে চলে যাবে। ভাবুনতো এই ভয়াবহ যাত্রার সময় পাশে একটা প্রিয় মানুষও নেই! কেমন কঠিন?

      কয়েকজনের ভালবাসার খুনী হবো নাকি অন্তত একটা ভালবাসার গল্প বাঁচানোর কারণ হবো? সিদ্ধান্ত আমারই।

      Professor Answered on February 12, 2024.
      Add Comment

        একজন সফল ডাক্তার। তার একজন সুন্দরী বউ আছে যাকে জীবনের চেয়ে বেশী ভালবাসে। বউ প্রেগনেন্ট। এক জোড়া ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জনক সে। জমজ কন্যাদের বয়স ১২। সুন্দর ছিমছাম পরিবার। হাসি আনন্দে ভরপুর। প্রতিদিন রোগী দেখেন, বাসায় আসেন পরিবারের সাথে সময় কাটান। হটাৎ আমাদের পৃথিবী ভয়ানক ভাইরাসে আক্রান্ত। সমানে মারা যাচ্ছে মানুষ। জীবন রক্ষার শপথ নেওয়া ডাক্তাররা মৃত্যুর ঝুঁকি আছে জেনেও থামতে পারেন না। ঝাপিয়ে পড়েছে সকল ডাক্তার নামের সত্যিকারের বীরেরা। হার মানাতে সকলের কমন শত্রুকে।

        ভাইরাসটা ভয়াবহ রকমের ছোঁয়াচে। সেই ডাক্তার আক্রান্ত হয়ে গেলেন। তিনি জানেন আর তার বাড়ি ফেরা হবে না। কিন্তু একবার তার পরিবারকে দেখতে তাকে যেতে হবেই হবে। সে সবরকম প্রটেকশান নিয়ে বাসার বাহিরের গেটে দাড়িয়ে টাটা দিচ্ছে দুই কন্যাকে। স্ত্রীর চোখ ছলছল। দুপাশ থেকেই দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরার তীব্র বাসনা। কিন্তু সম্ভব না। হয়তোবা এই যাওয়াই শেষ যাওয়া এক জোড়া মেয়ের বাবার। হয়তো এই যাওয়াই শেষ যাওয়া একজন স্ত্রীর স্বামীর। চলে যেতে হবে। গাড়ি আসলো, পিছনের দরজা খুলে গেলো। সে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ীর দিকে। পেছনে ফেলে যাচ্ছে জগতের সব ভালবাসা……

        কঠিন কি? এরকমই কিছু একটা পড়েছিলাম ফেসবুকে কতটা সত্য কতটা গুজব কে জানে। কিন্তু অসম্ভব নয়।


        মীরার স্বামী মারা গিয়েছে অনেকদিন হয়। সেই থেকে শব্দই(তার ছেলে) তার একমাত্র দুনিয়া। শব্দের বয়স আট। মা ছাড়া সে কিচ্ছু বোঝে না। প্রতিদিন সকালে মা তাকে হোমে দিয়ে যায় আর সন্ধ্যায় ফেরার পথে বাসায় নিয়ে যায়। আসা যাওয়ার এই সময়টা শব্দের খুব প্রিয়। এই সময় তারা দুজন রাজ্যের সব গল্প করে। মা তাকে কবিতা শোনায় মাঝে মাঝে। চারদিকে করনার প্রভাব। মীরা জানে তার বাসায় থাকা উচিত, কিন্তু অফিস ছুটি দেয় নি। তাকে যেতেই হবে।

        মীরা আক্রান্ত করোনা ভাইরাসে। তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শব্দ চিৎকার করে বলছে, মা আমার মাকে তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো। আমি আম্মুর কাছে যাবো। সে হুটোপুটি করছে। কিন্তু পুলিশ তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। তার মায়ের কাছে তাকে যেতে দেওয়া হবে না। মীরা একবার ফিরে তাকালো। তার কি আর একবার শব্দকে ঝাপটে ধরার বাসনা পূর্ণ হবে। শুধু একবার? হবে?

        কঠিন?


        স্পেন থেকে এসেছে মাহাতাব। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবারের সাথে দেখা। শালার স্পেনে পাঁচবার টেস্ট করছে। আর এরা আমাকে বলে কিনা বাসায় বন্দি থাকতে। আমি পুরো সুস্থ মানুষ। আমার চেয়ে এরা বেশী বোঝে। কতদিন পর আব্বারে দেখুম। তারে কি জড়ায় ধরবো না নাকি? বাড়ি ফিরে মাহাতাব ঝাপটে ধরলো পিতা মফিজ মিয়াকে। পা ধরে সালাম করলো। মাকে আঁকড়ে ধরলো। মাহাতাবের দুনিয়াতে আর কেউ নেই। এদের দুজনের জন্যেই এতকিছু।

        বাজান এবার তোরে একটা বিয়া দিমু

        কি যে কন আম্মা। এখনের মেয়েরা ভাল নাকি? আপনার সাথে পরে ঝামেলা করবো। আমি বিয়া করুম না আম্মা।

        কি যে কছ মনা, আমি কি ঝামেলার মানুষ নাকি। একটা মাইয়া দেখছি তোর জন্য। দেখিস তুই। আগে খায়া নে।

        আম্মা আমারে কয় চৌদ্দ দিন রুমে বন্দি থাকতে এতদিন পর আপনাগো দেখছি আটকা থাকুম কেমনে?

        আরে ধূর আমার পোলার রোগ হয় নাকি। যতসব ফালতু কথা বাজান।

        দশদিন পর মাহতাব, তার বাবা আর মা হাসপাতালে ভর্তি। সবার অবস্থা খুব সিরিয়াস। মাহাতাবের বাবা হার্টের রোগী আর মায়ের ডায়বেটিস।

        মাহতাব সুস্থ। তার এমিউন সিস্টেম ভাল ছিল। কিন্তু বাসায় ভাত বেড়ে দেওয়ার কেউ নেই। জাপটে ধরার কেউ নেই। তার বাবা মায়ের শেষকৃত্য কিভাবে কোথায় হয়েছে তার জানা নেই। জানালার বাহিরে তাকিয়ে মাহাতাব কি দেখে শুন্য আকাশে? নীল আকাশ এত অন্ধকার লাগে কেনো? সে কি খুনী? সে কি খুন করেছে?

        কঠিন?


        আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি খুব কঠিন। আমরা অনেকেই আছি এর ভয়াবহতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছি। এর পরিনতি প্রতিদিন টিভিতে দেখেও আমাদের হুশ হচ্ছে না। আসলে যতক্ষন নিজের উপরে না আসে ততক্ষন আমাদের ঘুম ভাঙে না। এখনো সময় আছে একটু সাবধান হই একটু সিরিয়াস হই। নাইবা হলাম নিজের জন্য কিন্তু বাবার কথা ভাবি, আমার মায়ের কথা ভাবি, আমার ছোট্ট শিশুর কথা ভাবি। আমার শহরের পরিচিত অপরিচিত সব মানুষগুলোর কথা ভাবি।

        মৃত্যু ভয়ানক। মৃত্যুর পর মানুষটা চিরতরে হারিয়ে যাবে। কখনো তার গায়ের গন্ধ শুকতে পাবো না। তাকে ধরতে পারবো না। তার সাথে আর হাসতে পারবোনা। সে দৃষ্টিসীমার বাহিরে চলে যাবে। ভাবুনতো এই ভয়াবহ যাত্রার সময় পাশে একটা প্রিয় মানুষও নেই! কেমন কঠিন?

        কয়েকজনের ভালবাসার খুনী হবো নাকি অন্তত একটা ভালবাসার গল্প বাঁচানোর কারণ হবো? সিদ্ধান্ত আমারই।

        Professor Answered on February 12, 2024.
        Add Comment
      • RELATED QUESTIONS

      • POPULAR QUESTIONS

      • LATEST QUESTIONS

      • Your Answer

        By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.