নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া কোনও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা রয়েছে?
নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া কোনও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা রয়েছে?
তখন আমি একটা পত্রিকা অফিসে চাকরি করি। অফিসের কাজে আমি ঢাকার বাইরে যাই। গোপালগঞ্জ। গোপালগঞ্জে নির্বাচন হবে। ইউপি নির্বাচন। সেই নির্বাচন কাভার করতে ঢাকা থেকে যাই। নির্বাচনের দুই দিন আগেই গোপালগঞ্জ চলে যাই। অত্র এলাকা পরিদর্শন করি। চারিদিকে নির্বাচনের আমেজ। নির্বাচন খুবই খারাপ ব্যাপার, আমাদের মতো দেশের জন্য।
রাতে ভাত খেতে ভাটিয়াপাড়া যাই। শুনেছি সেখানে বেশ কয়েকটা রেস্টুরেন্ট আছে। খাবারের মান ভালো। বেশ ভালো। রাতে অনেক পদের খাবার দিয়ে আরাম করে খেলাম। ফেরার পথে ভাবলাম গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে যাই। সময় কম লাগবে। আমার সাথে আরো কয়েকজন ছিলো, অন্য পত্রিকার লোক।পোনা গ্রামের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। পুরো তামিল সিনেমা স্টাইলে আমাদের ঘিরে ধরলো। আমার সাথের লোকজন ধানক্ষেত দিয়ে দৌড় শুরু করলো। আমাকে চারজন মিলে ধরলো।
রাত তখন সাড়ে এগারোটা বাজে। গ্রামের কিছু লোক আমাকে ঘিরে ধরলো। তারা আমাকে মারতে শুরু করলো। গাছের ভাঙ্গা ঢাল দিয়ে খুব পেটাচ্ছে। মার খেতে খেতে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। জিজ্ঞেস জরলাম, আমাকে মারছেন কেন? তারা বলল, তুই ডাকাত। ততক্ষণে গ্রামের সব লোক জমা হয়েছে। তাদের চোখে মুখে অনেক রাগ। তারা আমাকে একেবারে মেরে ফেলতে চায়।
আমি তখন বললাম, আমি সাংবাদিক। ঢাকা থেকে এসেছি। আমার আইডি কার্ড দেখালাম। তখন একলোক বলল, আমি অমুক পত্রিকার সাংবাদিক। জেলা প্রতিনিধি। দেখি আইডি কার্ড। লোকটা আমার আইডি কার্ড দেখে বলল, এটা নকল আইডি কার্ড। আশেপাশের লোকজন নকল আইডি কার্ডের কথা শুনে প্রচন্ড ক্ষেপে গেলো। তারা আমাকে পাগলের মতো মারতে শুরু করলো। আমার গেঞ্জি ছিড়ে গেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত পড়ছে। আমি মনে মনে ধরেই নিলাম, এরা আমার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আমাকে মারতেই থাকবে।
আমার ভাগ্য ভালো, পুলিশ চলে এলো। পুলিশ আমাকে তাদের গাড়িতে উঠিয়ে আমাকে থানায় নিয়ে গেলো। গাড়িয়ে থাকা অবস্থায় আমি বললাম, আমি একজন সাংবাদিক। পুলিশ বলল, প্লীজ এখন কোনো কথা বলবেন না। আগে আপনার প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োজন। শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত পড়ছে। থানায় যাওয়ার পর পুলিশ আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে লকাপে ডুকিয়ে দিলো। জীবনে প্রথন লকাপে। নোংরা পরিবেশ। বাজে গন্ধ। প্রচুর মশা। উন্মুক্ত তিন ফিট দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছাদখোলা টয়লেট। ভয়াবহ গজব অবস্থা।
সকালে আমি ছাড়া পাই। অফিসার আমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে জোর করে নাস্তা করালো। আমার হাত ধরে দু:খ প্রকাশ করলো। অত্র এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট দু:খ প্রকাশ করলো। পুলিশ তাদের গাড়ি দিয়ে আমাকে ফরিদপুর পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। ঢাকা আসার পর জ্বরে পড়লাম। পুরো শরীর ব্যথা। আমার পুরো শরীরে দাগ। আসলে পোনা গ্রামের মানুষজন ডেঞ্জারাস। এই গ্রামে আর কোনোদিন যাবো না। নো নেভার।